ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ব্যক্তিত্ব ও প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে ঘিরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দাবি করেছেন, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (পূর্বনাম পিজি হাসপাতাল) প্রিজন সেলে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে সাঈদী ইন্তেকাল করেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, অসুস্থ অবস্থায় কাশিমপুর কারাগার থেকে সাঈদীকে ঢাকায় এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেননি। ডা. শফিকুর রহমানের ভাষ্যে, নানা মাধ্যমে চিকিৎসায় অবহেলার তথ্য ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, চিকিৎসার সংকটময় মুহূর্তে সাঈদীর স্ত্রী ও সন্তানদের তাকে দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, পরিবার থেকে দূরে হাসপাতালে তার জীবনাবসান ঘটে।
জানাজা ও জনসমাগমে বাধা অভিযোগ
ডা. শফিকুর রহমান জানান, মৃত্যুর পর ঢাকায় জানাজা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় বিপুলসংখ্যক মানুষ রাজপথে নেমে আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি নিক্ষেপ করে, যার ফলে বহু মানুষ আহত হন। পরে মরদেহ পিরোজপুরে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। উপস্থিতরা অশ্রুসিক্ত নয়নে দোয়া করেন এবং তাকে স্মরণ করেন।
সাঈদীর কর্ম ও আদর্শ নিয়ে স্মৃতিচারণ
জামায়াত আমির বলেন, আল্লামা সাঈদী অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় কোরআনের তাফসির প্রচারে ব্যয় করেছেন। দেশ-বিদেশে তার অসংখ্য ওয়াজ, বক্তব্য ও ভিডিও ছড়িয়ে রয়েছে, যা এখনও বহু মানুষকে ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করছে। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে এবং বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার রচিত গ্রন্থ, বিশেষ করে ইসলামী সাহিত্য, তাফসির ও সিরাত বিষয়ক বইগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পথ দেখাবে বলে ডা. শফিকুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া, তিনি যে দ্বিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা থেকে নতুন প্রজন্মের ইসলামি দাঈ ও মুফাসসির তৈরি হবে এবং তারা তার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নেবে।
তার জীবন দর্শন ও উত্তরাধিকার
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সাঈদী ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের এক নির্ভীক কণ্ঠস্বর। আজীবন তিনি আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও মানবতার কল্যাণে কাজ করে গেছেন। যদিও তিনি আমাদের মাঝে নেই, তার কর্ম ও আদর্শ এখনো জীবিত। তার দেখানো পথে চললে ন্যায়, ইনসাফ ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন সম্ভব বলে উল্লেখ করেন ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি সাঈদীর ইলম, দাওয়াত ও ত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন এবং তার অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রেক্ষাপট
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশের একজন আলোচিত আলেম ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কোরআনের ব্যাখ্যা ও ইসলামী শিক্ষা প্রচারে যুক্ত ছিলেন। তার জীবন নিয়ে যেমন সমর্থকদের গভীর ভালোবাসা ছিল, তেমনি বিভিন্ন সময়ে বিতর্কও সৃষ্টি হয়েছে। তার মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ এখন নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
Leave a Reply