লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় ঘটে গেছে হৃদয়বিদারক এক ঘটনা। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ২০২৫ ইং রাতে উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের কুমারপাড়া এলাকায় একই রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে স্বামী ও অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর মরদেহ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মৃতরা হলেন—কুমারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদের ছেলে অলি মিয়া (৩০) এবং তার নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ছকিনা বেগম (২৬)।
পারিবারিক কলহ থেকে মর্মান্তিক ঘটনা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অলি মিয়ার মা শরিফা বেগমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই ছকিনা বেগমের পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রায়ই ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়তেন শাশুড়ি ও বউমা। সোমবার দুপুরেও একই কারণে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়।
এরপর অলি বাড়ি ফিরলে বিষয়টি শুনে তিনি মায়ের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বৃদ্ধা মা ছেলের বিরুদ্ধে স্থানীয় গোতামারী ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দেন। ওই ঘটনার জেরেই সন্ধ্যায় ঘরে কেউ না থাকায় অলি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী একসঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
প্রতিবেশীদের চোখে ধরা পড়ে লাশ
রাত গভীর হলেও অলিদের ঘর থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে দরজা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করে একই রশিতে স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশের বক্তব্য
খবর পেয়ে হাতীবান্ধা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুন নবী জানান—
“আমরা ঘটনাস্থল থেকে স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরেই তারা আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।”
এলাকাজুড়ে শোক
ঘটনার পর গোটা এলাকায় নেমে আসে নীরবতা। মাত্র কয়েক মাস পর নতুন প্রাণের আগমনের অপেক্ষায় থাকা একটি পরিবার এভাবে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া স্থানীয়দের স্তম্ভিত করেছে। এলাকাবাসীর অনেকে বলছেন, পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদের কারণে এ ধরনের করুণ ঘটনা ঘটতে পারে না। মানুষকে আরও সহনশীল হতে হবে।
সামাজিক বিশ্লেষণ
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্রামীণ সমাজে পারিবারিক দ্বন্দ্ব অনেক সময় বড় ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দেয়। বিশেষ করে মানসিক চাপ ও সামাজিক সংকট যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তাহলে মানুষ আত্মঘাতী হওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই ঘটনা তার বাস্তব উদাহরণ।
প্রশাসনের সতর্কতা
পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। একই সঙ্গে তারা জনগণকে আহ্বান করেছেন, পরিবারে কোনো সমস্যা থাকলে তা আইনের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতে, যাতে আর কোনো পরিবার এভাবে নিঃশেষ না হয়।
শেষকথা
একই রশিতে ঝুলে থাকা স্বামী-স্ত্রীর করুণ মৃত্যুর এই ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল পারিবারিক শান্তি-সম্প্রীতির গুরুত্ব। শুধুমাত্র সামান্য বিবাদ বা মতবিরোধই একটি পরিবারকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে পারে। সমাজে সচেতনতা, সহনশীলতা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব।