নিজস্ব সংবাদদাতা, নীলফামারী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হতে হবে। তিনি মনে করেন, দেশের জনগণ এখন পরিবর্তন চায় এবং এ পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো পিআর ব্যবস্থা।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ২০২৫ ইং নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের আল-ফালাহ অফিস প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালাটির সভাপতিত্ব করেন আসন পরিচালক ও উপজেলা আমীর মোখলেছুর রহমান। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের প্রায় শতাধিক দায়িত্বশীল নেতা উপস্থিত ছিলেন।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ইতোমধ্যেই তাদের মতামতের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, তারা পরিবর্তন চায়। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন যেনো উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, সেটাই জনগণের প্রত্যাশা। তিনি আরও বলেন, “যারা নির্বাচনে কৌশল ও কারসাজির আশ্রয় নেন, তারা সবসময় পিআর পদ্ধতিকে ভয় পান। কারণ, এ ব্যবস্থায় কেউ স্বৈরশাসক বা ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে পারে না। একইসঙ্গে এ পদ্ধতি কার্যকর হলে আর কাউকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে না। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে পিআর ব্যবস্থা চালু করতেই হবে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের বিষয়ে দেশে সক্রিয় ৩৩টি দলের মধ্যে ২৬টি দল একমত হয়েছে। কিন্তু তারপরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিষয়ে নানা গড়িমসি করছে। তাই তিনি দাবি জানান, জনগণের কাছে গণভোটের মাধ্যমে এ পদ্ধতি এবং জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা হোক।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সহকারী অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, নীলফামারী জেলা আমীর ও নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সম্ভাব্য সংসদ প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার, জেলা নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য প্রভাষক আব্দুল কাদিম, প্রভাষক মনিরুজ্জামান জুয়েল ও প্রভাষক ছাদের হোসেন।
এছাড়া নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের সম্ভাব্য সংসদ প্রার্থী ও জেলা মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফীও কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সঞ্চালনা করেন আসন সচিব ও উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর কামারুজ্জামান।
উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোয়াম্মার আল হাসান, সহকারী সেক্রেটারি মুজাহিদ মাসুমসহ উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পিআর পদ্ধতির পক্ষে যুক্তি
মাওলানা আবদুল হালিম তাঁর বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। তিনি উল্লেখ করেন, পিআর পদ্ধতিতে জনগণের প্রতিটি ভোট মূল্যায়িত হয় এবং যে রাজনৈতিক দলগুলো ভোট পায়, তারা সেই অনুপাতে সংসদে আসন লাভ করে। এর ফলে কোনো দলই একচেটিয়া ক্ষমতা অর্জন করতে পারে না এবং সরকার পরিচালনায় ভারসাম্য বজায় থাকে।
তিনি বলেন, “পিআর ব্যবস্থা কার্যকর হলে দেশের প্রতিটি মানুষ নিশ্চিতভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবে এবং ফলাফলের মাধ্যমে প্রকৃত গণরায় প্রতিফলিত হবে। এভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আরও সুসংহত হবে।”
কর্মশালার পরিবেশ
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনের বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত নেতৃবৃন্দ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তারা নির্বাচনী প্রস্তুতি, সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। অনেকেই পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের পক্ষে মতামত দেন এবং জনগণের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানান।
কর্মশালার সভাপতি মোখলেছুর রহমান বলেন, “দেশের মানুষ ভোট দিতে চায়, কিন্তু তাদের সেই অধিকার সঠিকভাবে প্রয়োগের সুযোগ পেতে হবে। আমরা চাই, আসন্ন নির্বাচন হোক একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন।”
শেষকথা
কর্মশালায় উপস্থিত নেতারা একযোগে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, যদি নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হবে।