নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম। শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
রাঙ্গুনিয়ার ছোট্ট শিশু উম্মে আয়শা আনিকা (৪) মায়ের সঙ্গে রাউজানের নোয়াপাড়া কচুখাইন এলাকায় খালার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মারা গেছেন। আনিকার মৃত্যুর ঘটনা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, খেলার সময় পুকুরে পড়ে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
আনিকা চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের আসকার আলী রোডের দক্ষিণ পাশে গোলাপ শাহ মাজার সংলগ্ন প্রবাসী মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের কন্যা। বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আনিকার স্বজন মোহাম্মদ আজাদ বলেন, “আনিকা বাড়ির কাছে খেলা করছিল। সন্ধ্যার দিকে সবাই তার দিকে খেয়াল রাখছিল না। একসময় সে পাশের পুকুরে পড়ে যায় এবং ডুবে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।”
পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিঃসঙ্গ মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ এ দুর্ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়েছেন।
আনিকার বাবা প্রবাসী আলাউদ্দিন বর্তমানে মেয়েকে শেষবার দেখার জন্য দেশে ফিরছেন। তার আগমনের পর শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরফভাটা মীর আফাজ চৌধুরী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দুইতলা জামে মসজিদ মাঠে আনিকার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
স্থানীয়দের মতে, আনিকার মৃত্যু কেবল পরিবারকেই নয়, পুরো এলাকায় শোকের সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন জানাচ্ছেন, ছোট্ট শিশুটি খুব হাসিখুশি এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে ভালোবাসত। তার এই আকস্মিক মৃত্যু এলাকায় সবাইকে স্তম্ভিত করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, শিশুদের খেলার সময় নিরাপত্তার প্রতি সর্বদা নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুকুর বা জলাশয়ের পাশে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, শিশুদের জন্য খেলার স্থান নির্বাচন করার সময় সবসময় নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। পাশাপাশি পুকুর, খাল বা অন্যান্য জলাশয়ের পাশের এলাকায় পর্যাপ্ত নজরদারি ও বেড়া নির্মাণ করা জরুরি। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা রোধে স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সহমিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত প্রয়োজন।
আনিকার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিবেশী ও পরিবারজন সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করছেন। তারা জানাচ্ছেন, শিশুটি খুবই প্রাণবন্ত ও স্নেহময়ী ছিল। পরিবার এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। স্থানীয়রা এই ঘটনায় শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলে ছোট শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলার পরিবেশের অভাব অনেকদিনের সমস্যা। স্থানীয় প্রশাসন বারবার শিশুদের জন্য নিরাপদ খেলার স্থান নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে, তবে এখনও পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি। এই ঘটনা পুনরায় একবার সতর্কবার্তা হিসেবে কার্যকর হচ্ছে।
পরিবার এবং স্থানীয়রা সবাই আশা করছেন, ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর কখনও ঘটবে না। ছোট্ট আনিকার অকাল মৃত্যু চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া অঞ্চলের মানুষের মনে দীর্ঘদিন স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে।