
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। বাড়ির পাশের পুকুরে ছোট ভাই ডুবে গেলে তাকে বাঁচাতে পানিতে ঝাঁপ দেয় বড় বোন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ভাই-বোন দুজনেরই প্রাণ যায় পানিতে ডুবে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে নবীনগরের উত্তর কাইতলা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে।
নিহত দুই শিশুর নাম মো. শরীফ (৭) ও তার বড় বোন শিফা (৮)। তারা ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. সাদ্দামের সন্তান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে বাড়ির পাশে খেলার সময় হঠাৎ পুকুরের ধারে চলে যায় ছোট ভাই শরীফ। অসাবধানতাবশত সে পানিতে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বড় বোন শিফা দৌড়ে এসে ভাইকে বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। তবে গভীর পানিতে দুজনেই তলিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশীরা তাদের পানিতে ভাসতে দেখে চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। দ্রুত উদ্ধার করে তাদের নোয়াগাঁও বাজারের একটি স্থানীয় ফার্মেসিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর পুরো গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রতিবেশীরাও জানিয়েছেন, শরীফ ও শিফা খুবই মায়াবী ও শান্ত স্বভাবের শিশু ছিল। একে অপরের প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা, যা শেষ পর্যন্ত মৃত্যুতেও একে অপরকে আলাদা করতে পারেনি।
নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, “শরীফ পানিতে পড়ে গেলে শিফা এক মুহূর্তও দেরি করেনি। ভাইকে বাঁচাতে সে ঝাঁপ দিয়েছিল, কিন্তু ভাগ্য তাদের বাঁচতে দিল না।”
স্থানীয় এক গৃহিণী বলেন, “বাচ্চা দুজন সবসময় একসাথে খেলত, একসাথে স্কুলে যেত। আজ তারা একসাথেই চলে গেল।”
ঘটনার বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম জানান, “এই বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পানি ডুবে শিশুদের মৃত্যুর এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রায়ই বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে পরিবারের সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। পুকুর, খাল, ডোবা বা যেকোনো জলাশয়ের আশেপাশে শিশুদের একা খেলতে না দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে প্রতি বছর শতাধিক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই তা ঘটে অসচেতনতার কারণে। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
মানুষের অসাবধানতা এবং শিশুদের কৌতূহলই অনেক সময় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এখনই প্রয়োজন পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এই ঘটনার পর নোয়াগাঁও গ্রামে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সবাই বলছেন—“এক মুহূর্তের অবহেলায় হারিয়ে গেল দুই নিষ্পাপ প্রাণ।”
এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া, শিশুদের জন্য আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম।