
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় মাদকবিরোধী অভিযানে ১২৮ বোতল ভারতীয় তৈরি ইস্কাপ কাশির সিরাপ জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এক স্বামী-স্ত্রীসহ মোট তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও অপর দুইজনের একজন এখনো পলাতক রয়েছে।
জানা যায়, গত রবিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর এলাকায় পুলিশ এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে খবির হোসেন (৩৪) এর বাড়ি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ইস্কাপ সিরাপ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলেই খবির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারকৃত খবির হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে কাশির সিরাপ এনে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করতেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ ঘটনায় খবির হোসেনের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার সুমি (৩০) এবং সহযোগী পলাশ মিয়া (২৭)-কেও সহ-আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পলাশ মিয়া বর্তমানে পলাতক বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, “আমরা খবর পেয়ে চন্দ্রপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। ঘটনাস্থল থেকে ১২৮ বোতল ভারতীয় ইস্কাপ সিরাপ জব্দ করা হয়েছে। খবির হোসেনকে আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এলাকার মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
ওসি আরও বলেন, “মাদক আমাদের সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় অভিশাপ। যারা এ কাজে জড়িত, তারা সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শত্রু। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে পুলিশ সর্বদা কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
স্থানীয়রা জানায়, চন্দ্রপুর এলাকায় কিছুদিন ধরে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের কিছু মাদক ব্যবসায়ী গোপনে ভারতীয় মাদকদ্রব্য আমদানি ও বিক্রি করে আসছিল। এসব মাদক যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, যা এলাকায় উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। পুলিশের এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
এলাকার একজন বাসিন্দা জানান, “আমরা চাই, পুলিশ এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চালিয়ে যাক। অনেকেই এই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এতে তরুণ প্রজন্ম নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসন কঠোর হলে এসব বন্ধ হবে।”
মাদকবিরোধী অভিযানের বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “মাদক ব্যবসায় জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলবে।”
এদিকে, পুলিশের এ সফল অভিযানে সাধারণ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় গ্রেপ্তারকৃত খবির হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মাদকবিরোধী এই অভিযানের ফলে চন্দ্রপুর এলাকায় সাময়িক স্বস্তি ফিরলেও স্থানীয়রা মনে করছেন, টেকসই সমাধানের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন। পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের সব শ্রেণির মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে।
এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি একটি বড় সিন্ডিকেটের অংশ, যারা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় মাদকদ্রব্য এনে সারা এলাকায় ছড়িয়ে দেয়। তবে প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে এখন অনেকেই আতঙ্কে রয়েছে।