
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট:
ঢাকার ধামরাই পৌরসভা প্রাঙ্গণে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল পাহারা দিতে দীর্ঘদিন ধরে দু’জন আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে বলে জানা গেছে। পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময় নির্মিত এই ম্যুরাল ও এর নিরাপত্তা ব্যয়ের বৈধতা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে যেভাবে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতায় ধামরাই পৌরসভায়ও একটি ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। সাবেক মেয়র গোলাম কবির মোল্লার সময় পৌরসভা চত্বরে নির্মিত এই ম্যুরালের পেছনে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এরপর নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে পৌর ফান্ড থেকেই দু’জন আনসার সদস্যকে মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পৌর কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে তেমন কিছু বলতে না চাইলেও অনেকেই বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, ম্যুরাল নির্মাণ থেকে শুরু করে আনসার সদস্য নিয়োগ—সবকিছুতেই নিয়মকানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন ছাড়াই এত ব্যয়বহুল একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং পরে তার জন্য পৌর রাজস্ব থেকে ব্যয় করা কতটা যৌক্তিক—সেই প্রশ্ন তুলছেন তারা।
পৌর বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, তৎকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নানা অনিয়ম পৌর প্রশাসনে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ ধরনের ব্যয় ও নিয়োগকে তারা সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ এবং বেআইনি বলে দাবি করেন। তাদের বক্তব্য, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া পৌরসভা এলাকায় এ ধরনের ম্যুরাল নির্মাণ বা আনসার সদস্য নিয়োগ কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না।
সাবেক পৌর মেয়র নাজিম উদ্দিন মনজুও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, ম্যুরাল নির্মাণে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে তা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি যিনি ম্যুরালটি তৈরি করেন, তিনি নাকি পুরো পাওনা এখনো পাননি। এরপরও পৌরসভা থেকে দীর্ঘদিন ধরে আনসার সদস্যদের বেতন প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামনুন আহমেদ অনিক জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় আনসার সদস্যদের নাইট গার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তবে পৌরসভায় আগেই নিয়োজিত তিনজন নাইট গার্ড থাকায় অতিরিক্ত দুইজন আনসার সদস্য রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
স্থানীয়দের দাবি, পুরো বিষয়টির সঠিক তদন্ত প্রয়োজন। ম্যুরাল নির্মাণ, ব্যয় এবং আনসার নিয়োগ সংক্রান্ত নথিপত্র যাচাই করলে প্রকৃত তথ্য পরিষ্কার হবে বলে মনে করছেন তারা।