নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক অদ্ভুত ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। নাওডোবা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোক্তার বেপারীকে শুক্রবার দুপুরে থানার আয়োজিত ভোজসভায় আমন্ত্রণ জানানো হলেও, একই রাতে সমালোচনার মুখে পড়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় মাসিক ভোজের আয়োজন করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহমেদ সেলিম। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং থানার সদস্যরা অংশ নেন। ভোজসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ পান নাওডোবা বাজার কমিটির সভাপতি মোক্তার বেপারী। তবে তিনি যুবলীগের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি হওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আলোচনার ঝড় তোলে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোজসভায় ওসির সঙ্গে যুবলীগ নেতার উপস্থিতির ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সচেতন মহলের অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, পুলিশি প্রতিষ্ঠানে কেনো রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকে অতিথি করা হলো? ঠিক এই সমালোচনার পরেই শুক্রবার গভীর রাতে মোক্তার বেপারীকে নিজ বাড়ি কালু বেপারী কান্দি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে ওসি পারভেজ আহমেদ সেলিম সাংবাদিকদের বলেন,
“আমাদের নিয়মিত ভোজসভায় তিনি বাজার কমিটির সভাপতি পরিচয়ে উপস্থিত ছিলেন। পরে নিশ্চিত হই যে তিনি যুবলীগের নেতা। এরপর সার্কেল স্যারের নির্দেশে রাতেই তাকে আটক করা হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, মোক্তার বেপারীকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন,
“যে কোনো ব্যক্তিকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারি যদি তার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তবে এই ঘটনায় ওসির ভূমিকা আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি যদি কোনো নিয়ম ভঙ্গ করে থাকেন, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনাটি ঘিরে স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
শরীয়তপুরের রাজনৈতিক মহল বলছে, একজন থানার ওসি সরকারি দায়িত্বে থেকে নিষিদ্ধ থাকা রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকে ভোজসভায় ডাকা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। অনেকের মতে, এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
স্থানীয় সচেতন মহলের অনেকে বলছেন, “যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে মোক্তার বেপারী যুক্ত থাকেন তবে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু একই দিনে আমন্ত্রণ জানিয়ে পরে গ্রেপ্তার করা – এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।”
অন্যদিকে মোক্তার বেপারীর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য, “আমাদের ভাইকে সম্মান দিয়ে থানায় ডেকে খাওয়ানো হলো, আবার রাতে গ্রেপ্তার করা হলো – এটি ন্যায্য হতে পারে না।”
বিশ্লেষণ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক নিয়ে নানা বিতর্ক বহুদিন ধরেই রয়েছে। বিশেষ করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে পুলিশের যোগাযোগ নতুন কিছু নয়। তবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে—পুলিশ আসলেই কতটা নিরপেক্ষ?
এ বিষয়ে স্থানীয় এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন,
“একদিকে পুলিশ রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বলে, অন্যদিকে সেই দলের নেতাকে থানায় আমন্ত্রণ জানায়। এটি দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়। সমালোচনার মুখে পরে গ্রেপ্তার করাটা আসলে আত্মরক্ষার কৌশল।”
শেষকথা
শরীয়তপুরের এ ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের সম্পর্কের জটিলতাকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। সমালোচনার মুখে পুলিশ প্রশাসন কী ধরনের পদক্ষেপ নেয় তা এখন দেখার বিষয়।