গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের ভবানীপুর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত এমজি নিট ফ্যাশন ও এমজি ফ্যাশন সুয়েটার লিমিটেডের শ্রমিকরা ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং রোববার সকাল থেকে ব্যাপক বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন যে, দীর্ঘদিন ধরে তাদের বেতন-ভাতা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি সম্প্রতি ৫৭ জন শ্রমিককে হঠাৎ চাকরিচ্যুত করার ঘটনায় তাদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা জানান, তারা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও মাস শেষে তাদের বেতন সময়মতো মেলে না। ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে বোনাস দেওয়া হয় না, যা তাদের পরিবারকে আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে। হঠাৎ চাকরিচ্যুতির ঘটনায় পরিবার-পরিজনও অসহায় হয়ে পড়েছে।
একজন শ্রমিক বলেন, “আমরা প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করি, কিন্তু আমাদের অধিকার রক্ষা করা হয় না। সহকর্মীদের চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ জানানো আমাদের বাধ্যবাধকতা।” আরেক শ্রমিক যোগ করেন, “যদি আমাদের দাবি পূরণ না হয়, আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।”
মানববন্ধনের চিত্র
বৃষ্টির মধ্যেও শত শত শ্রমিক মানববন্ধনে অংশ নেন। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে ধরে অবস্থান নেন। প্রায় প্রতিটি ব্যানারে লেখা ছিল— “শ্রমিক বাঁচলে শিল্প বাঁচবে”, “বেতন ভাতা নিয়মিত দিতে হবে”, “বহিষ্কার প্রত্যাহার করতে হবে”। বিক্ষোভের কারণে ভবানীপুরের প্রধান সড়কে কিছু সময় যান চলাচল ব্যাহত হয়।
কর্তৃপক্ষের নীরবতা
এ ঘটনার পর পর্যন্ত এমজি নিট ফ্যাশন ও এমজি ফ্যাশন সুয়েটার লিমিটেডের কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, মালিকপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দমন করতে ৫৭ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে। বেতন-ভাতা প্রদানে অনিয়ম এবং শ্রম আইন লঙ্ঘন করার বিষয়েও শ্রমিকরা উদ্বিগ্ন।
প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ
ভবানীপুর শিল্পাঞ্চল দেশের পোশাক খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এখানে অসংখ্য শ্রমিক কাজ করেন এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। তবে এই শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক বঞ্চনা ও অসন্তোষ নতুন ঘটনা নয়। বেতন অনিয়ম, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা এবং চাকরির নিরাপত্তাহীনতা প্রায়ই শ্রমিক বিক্ষোভের জন্ম দেয়।
শ্রম বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হলে শুধু তাদের পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, পুরো পোশাক শিল্পের সুনামও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি।
শেষকথা
মানববন্ধন থেকে শ্রমিকরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন— তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন। বেতন-ভাতা নিয়মিত প্রদান এবং বহিষ্কারকৃত শ্রমিকদের পুনঃনিয়োগ এখন সময়ের দাবি। শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে আস্থা ও সমঝোতা ছাড়া শিল্পের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া। এতে শ্রমিকরা নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারবেন এবং দেশের পোশাক শিল্প আরও শক্তিশালী হবে।